সায়েম থেকে সিনহা

বিচারপতি সিনহা তাঁর বইয়ে কি লিখেছেন, কতটুকু সত্য বা কতটুকু মিথ্যে বলেছেন সে বিষয়ে বাহাসের জন্য এই লেখা নয়। বরং এই ধরনের বই যে অতীতেও লেখা হয়েছে আর সেই বইয়ের আর্তনাদ যে আরও তীব্র সেটি স্মরণ করাতেই এই লেখা। অনুগ্রহ করে পড়বেন, একটু সময় চেয়েই নিচ্ছি আপনার থেকে, হোকনা একটু নষ্ট সময়, কত সময়ই তো নষ্ট করে থাকেন, আজও না হয় একটু হলো সময়ের অপব্যবহার।

সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নতুন বই নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন এখন তপ্ত। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি এই নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। আমার মনেও আজ আজ ভীষণ এক জটলা বেঁধেছে।

আওয়ামী লীগ বলছে, ‘এই গ্রন্থে (ব্রোকেন ড্রিম) বিচারপতি সিনহা সত্যের অপলাপ করেছেন। নিজের অপকর্ম ঢাকতে এই বই লিখেছেন।’

অন্যদিকে বিএনপি নেতারা বলছেন, ‘সিনহার বই হলো বিচার বিভাগের উপর সরকারের নির্লজ্জ হস্তক্ষেপের এক দলিল।’

দেশের সুশীল সমাজও কম যান না। একজন দেখলাম বলেছেন, ‘এই বই নাকি এক কলঙ্ক উন্মোচন।’

হাইরে স্বার্থান্বেষী সুশীল! তোরা কখনওই বাংলার কোন মঙ্গলজনক সমাধান বয়ে আনতে পারলিইনা বরঞ্চ অমঙ্গলের জন্য নিজেদের কৃষ্টি দোষীতরক্তের নির্লজ্জ প্রকাশ করেই আত্মতৃপ্তির ডেকুর তুলে গেলি। তুলতে থাক, বাংলার মানুষ এখন ৬৫-৭৫% অশিক্ষিত নই, এখন শিক্ষিতের হার ৭৫% এর(এই মুহুর্তে সঠিকটা জানা নাই) উপরেই হবে হয়তো, এরা আগের চেয়ে অনেক দেশপ্রেমী, দেশের জন্য নিজের জানকে আজও কোরবানি দিতে প্রস্তুত, যেমনটি ছিল একাত্তরে। তোদের জবাব জনগণ দিবে অপেক্ষা করতে থাক। এর জন্যই বুঝি ফখরুদ্দীন বলেছিলেন 'বাংলার মানুষ সুশীল সমাজকে ঘৃণা করে, বিশ্বাস করেনা, আমি সুশীল হতে চাই না।' ঠিকই বলেছেন তিনি, তিনি মিশ্রবাঙালি জাতির হাড-নক্ষত্র টের পেয়েছেন অল্পতেই।

বাঙালি জাতি খুবই ভুলো মনের এক জাতি, ভুলে যাওয়া এদের উদারতার প্রকাশ আমার মতে, ভালো। কে আর পড়ে থাকতে চায় অতীতের কষ্ট বুকে চেপে! সেজন্যই আমরা খুব সহজেই অতীত ভুলে যাই।

বাংলাদেশের প্রথম বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রধান বিচারপতি হিসেবে সায়েমকে নিয়োগ দেন। আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম ছিলেন বাংলাদেশের ১ম বিচারপতি ও ৬ষ্ঠতম রাষ্ট্রপতি। 

তিনি ১৯৭৫ সালের ৬ নভেম্বর থেকে ১৯৭৭ সালের ১ এপ্রিল পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৭ এর ২১ এপ্রিল তিনি দূর্বল স্বাস্থ্যের কারণে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ছেড়ে দেন। তিনি ১৯৯৭ সালের ৮ জুলাই ইন্তেকাল করেন।

১৯৭৫ সালের ৬ নভেম্বর প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এবং রাষ্ট্রপতি হিসেবে সায়েমকে নিয়োগ দেন খালেদ মোশাররফ। ৭ নভেম্বর কর্নেল (অব.) তাহেরের পাল্টা ক্যু এ নিহত হন খালেদ মোশাররফ। সেনাপ্রধান হন জিয়াউর রহমান।

জিয়া ৭ নভেম্বরের ক্যু জেতার মাধ্যমে ক্ষমতার কেন্দ্রে এলেও রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে বহাল রাখেন বিচারপতি সায়েমকে।

বঙ্গভবনের দিনগুলো নিয়ে বিচারপতি সায়েম একটি বই লিখেছিলেন যে বইটির শিরোনামে ছিল, ‘অ্যাট বঙ্গভবন: লাস্ট ফেজ’। ১৯৮৮ সালে বইটি প্রকাশিত হয়।

১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার ৭ দিনের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বইটি বাজেয়াপ্ত এবং নিষিদ্ধ করে।

২৭৩ পৃষ্ঠার ঐ বইয়ের পাতায় পাতায় আছে তৎকালীন সেনা প্রধানের স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহারের চিত্র।

বইটির ২৩ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, ‘সংবিধানের ৪ টি মূল স্তম্ভ বাতিল সংক্রান্ত একটি সামরিক ফরমান আমার কাছে স্বাক্ষরের জন্য আসে।….. আমি ঐ ফরমানে স্বাক্ষর না করে, তা রেখে দেই।..…

পরদিন রাত ১১ টায় বুটের শব্দে আমার ঘুম ভাঙ্গে। সেনাপ্রধান জিয়া অস্ত্রশস্ত্রসহ বঙ্গভবনে আমার শয়ন কক্ষে প্রবেশ করে....। জিয়াউর রহমান আমার বিছানায় তাঁর বুটসহ পা তুলে দিয়ে বলেন, সাইন ইট। তাঁর একহাতে ছিল স্টিক, অন্য হাতে রিভলভার'।

বইটির শেষ অধ্যায় নাটকীয়........…
‘জিয়া বঙ্গভবনে আসতেন মধ্যরাতে, অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে। তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা অস্ত্র উঁচিয়ে রাখতো….. আমি প্রায়ই মনে করতাম এটাই বোধহয় আমার শেষ রাত...…!

এক রাতে তিনি এসে একটি কাগজ আমার বিছানায় ছুড়ে দিয়ে বললেন, সাইন ইট….. আমি কাগজটা পড়লাম। আমার পদত্যাগ পত্র। যাতে লেখা আছে, ‘অসুস্থতার কারণে আমি রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করলাম।’ আমি জিয়াউর রহমানের দিকে তাকালাম। ততক্ষণে আট দশজন অস্ত্রধারী আমার বিছানার চারপাশে অস্ত্র উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। জিয়া আবার আমার বিছানায় পা তুলে আমার বুকের সামনে অস্ত্র উঁচিয়ে বললেন, ‘সাইন ইট’। আমি কোনোমতে সই করে বাঁচলাম…।’

আজ যাঁরা সিনহার জন্য আর্তনাদ করছেন, যারা বলছেন, বিচারপতির সঙ্গে এহেন আচরণ নজিরবিহীন। যারা সিনহার দুর্নীতি এবং লাম্পট্যকে আড়াল করার জন্য মাতম তুলছেন, তাঁরা দয়া করে বাংলাদেশের প্রথম প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমের ‘অ্যাট বঙ্গভবন: লাস্ট ফেজ’ পড়বেন কি?

ইতিহাসের সন্ধানে- আমরা ক্রান্তি বলয়ের দেশে বাস করি, তাই ইতিহাস মনে রাখিনা। আমাদের সিরা-উপসিরার মধ্যে এখনো মীরজাফরের রক্ত প্রবাহমান___সাধু সাবধান।

(উপরোক্ত লেখাটুকু www.donarbangla24. net এর, নিজের মতো করে সাজিয়েছি, কিছু সংযোজনও করেছি নিজের মতামত।)

আসেন এবার দেখি দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত এসকে সিনহার দুর্নীতির আরো কিছু ধরণ-

সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, উেকাচ গ্রহণ ও মানি লন্ডারিংয়ের প্রমাণ পেয়েছে সরকার। একই সঙ্গে তিনি রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত। বেশ কিছু বিতর্কিত এবং অবাঞ্ছিত ব্যক্তিবর্গের সাথে তিনি যোগাযোগ রাখছেন।

সিঙ্গাপুরে তার একটি বাড়িও আছে। দায়িত্বশীল সূত্র জানায় যে, এসকে সিনহার প্রধান বিচারপতি থাকাবস্থায় এসব দুর্নীতি, অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ ওঠে। এ সকল অভিযোগের প্রেক্ষিতে একাধিক সংস্থা অনুসন্ধান চালিয়ে তার সত্যতা পেয়েছে এবং তদন্ত প্রতিবেদন সরকারের শীর্ষ মহলে জমাও দিয়েছেন।

জানা গেছে, এসকে সিনহার বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের অসংগতির চিত্র ফুটে উঠেছে। এই সূত্র ধরে আরো বিভিন্ন সংস্থা অনুসন্ধানের জন্য মাঠে নামে। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, এসকে সিনহার সুপ্রীম কোর্ট শাখার ব্যক্তিগত বেতন একাউন্টে লাখের ও কোটির অংকে ২৬ বার বিভিন্ন সময়ে লেনদেন হয়েছে।

এই লেনদেনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ২০১৬ সালের ৯ নভেম্বর পে-অর্ডারের মাধ্যমে জমাকৃত ৪ কোটি টাকা। ফারমার্স ব্যাংক, গুলশান শাখা, ঢাকা হতে জনৈক নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা এবং মোঃ শাহজাহান এর ঋণ একাউন্ট হতে ২ কোটি করে মোট ৪ কোটি টাকার পে-অর্ডার তত্কালীন প্রধান বিচারপতির একাউন্টে জমা হয়। উক্ত অবৈধ অর্থ যে সকল ব্যক্তি এবং একাউন্টের মাধ্যমে প্রধান বিচারপতির বেতন একাউন্টে জমা হয়, তার বিস্তারিত বিবরণ নিচে তুলে ধরা হলোঃ

®ক. ২০১৬ সালের ৬ নভেন্বর নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা (জাতীয় পরিচয় পত্র নং ১৯৭৬৯৩১২৫৪৭০০০০০১), পিতাঃ গোলক চন্দ্র সাহা নামে জনৈক ব্যক্তি ফারমার্স ব্যাংক, গুলশান শাখায় একটি ঋণ একাউন্ট খোলেন। একাউন্ট খোলার সময় তিনি তার বর্তমান ঠিকানা হিসেবে প্রধান বিচারপতির উত্তরার বাড়ী নং-৫১, রোড নং-১২, সেক্টর-১০ উল্লেখ করেন। ঋণ একাউন্টে উক্ত ব্যক্তি কোন টিন নম্বর কিংবা পাসপোর্ট নম্বর উল্লেখ করেননি। ঋণ একাউন্ট খোলার একদিন পরেই অর্থাত্ ৮ নভেম্বর নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা (হিসাব নং- ০১৭৩৫০০১৫৭২২৪) প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নামে ২ কোটি টাকার পে-অর্ডার (নম্বর- ০০৯২০৪৬, তারিখঃ ০৮ নভেম্বর ২০১৬) প্রেরণ করেন।

উক্ত ২ কোটি টাকার পে অর্ডারটি সিনহার বেতন একাউন্টে (একাউন্ট নম্বর ৪৪৩৫৪৩৪০০৪৪৭৫, সোনালী ব্যাংক সুপ্রীম কোর্ট শাখা) ৯ নভেম্বর তারিখে জমা হয়।

®খ. অপরদিকে একইভাবে ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর মোঃ শাহজাহান (জাতীয় পরিচয় পত্র নং ৯৩১২৫৪৭৪৩১২০৩), পিতাঃ মৃত আমির হোসেন, পেশাঃ চাকুরী/ব্যবসা ফারমার্স ব্যাংক গুলশান শাখায় আরেকটি ঋণ একাউন্ট খোলেন।

শাহজাহানের বর্তমান ঠিকানা হিসেবে প্রধান বিচারপতির উত্তরার বাড়ী নং-৫১, রোড নং-১২, সেক্টর-১০ উল্লেখ করেন। এক্ষেত্রেও উক্ত ব্যক্তির কোন পাসপোর্ট নম্বর কিংবা টিআইএন নম্বর দেওয়া হয়নি। মোঃ শাহজাহানও একই ভাবে তার নিজ ঋণ একাউন্ট (নং-০১৭৩৫০০১৫৭২৮৬ ফারমার্স ব্যাংক, গুলশান শাখা) থেকে ৮ নভেম্বর  প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নামে ২ কোটি টাকার পে-অর্ডার প্রদান (পে-অর্ডার নম্বর- ০০৯২০৪৭ তারিখ ০৮ নভেম্বর ২০১৬) করেন ।

উক্ত ২ কোটি টাকার পে অর্ডারটি সিনহার বেতন একাউন্টে (একাউন্ট নম্বর ৪৪৩৫৪৩৪০০৪৪৭৫, সোনালী ব্যাংক, সুপ্রীম কোর্ট শাখা) ৯ নভেম্বর জমা হয়।

নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা এবং মোঃ শাহজাহান নামের দুই ব্যক্তি যাদের বর্তমান ঠিকানা প্রধান বিচারপতির উত্তরার বাসা এবং স্থায়ী ঠিকানা টাংগাইলের একই এলাকায় উল্লেখ করা হয়েছে। ফারমার্স ব্যাংক, গুলশান শাখায় একই দিন অর্থাত্ ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর ঋণ একাউন্ট খোলা এবং ঋণ একাউন্ট থেকে দুই দিন পরেই একই তারিখে অর্থাত্ ৮/১১/১৬ তারিখে দুই কোটি করে চার কোটি টাকা প্রধান বিচারপতি সিনহার বেতন একাউন্টে জমা করা হয়।

এ ধরণের দুইজন ব্যক্তিকে আবেদনের সাথে সাথে ২ কোটি করে লোন প্রদান, একদিন পর পে-অর্ডারের মাধ্যমে প্রধান বিচারপতির নামে দুইটি পে-অর্ডারের মাধ্যমে উক্ত ৪ কোটি টাকা তার ব্যক্তিগত বেতন একাউন্টে জমা করার বিষয়টি সন্দেহজনক।

এতে প্রতীয়মান হয় যে, প্রধান বিচারপতি অবৈধ পথে উপার্জিত অর্থ ভুয়া একাউন্টের মাধ্যমে নিজ বেতন একাউন্টে স্থানান্তর করেছেন। এটি স্পষ্টত মানি লন্ডারিং এর আওতায় পড়ে। তিনি এ অর্থ কোন মামলায় অবৈধ সুবিধা দেওয়ার জন্য গ্রহণ করেছেন তাতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। পরবর্তীতে উক্ত টাকা ক্যাশ হিসেবে উত্তোলন করে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে গোয়েন্দা তদন্ত রিপোর্টে উঠে এসেছে।

অপরদিকে প্রধান বিচারপতির সোনালী ব্যাংকের হিসাব নম্বর ০১৭৩৫০০১৫৭২২৪ হতে ১,৪৯,০৬,০০০ (এক কোটি উনপঞ্চাশ লাখ ছয় হাজার) টাকা এবং ৭৪,৫৩,০০০ (চুয়াত্তর লক্ষ তেপ্পান্ন হাজার টাকা) তাঁর ভাই নরেন্দ্র কুমার সিংহ এর শাহজালাল ব্যাংক উত্তরা শাখা এর একাউন্ট নম্বর ৪০০৮১২১০০০৪৯০৪২-তে জমা করার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেয়েছে সরকার।  

উক্ত টাকা তিনি তাঁর আয়কর রিটার্নে প্রদর্শিত ভাইয়ের নামে বরাদ্দকৃত প্লট-১/এ, রোড-০৬, সেক্টর-৪, উত্তরা এর ফ্লাটে বিনিয়োগ করেছেন। এতে আরও প্রতীয়মান হয় যে, প্রধান বিচারপতি অবৈধ পথে উপার্জিত অর্থ ভুয়া একাউন্টের মাধ্যমে নিজ বেতন একাউন্টে স্থানান্তর করেছেন। এছাড়াও তিনি উক্ত অর্থ বিভিন্ন সময়ে তাঁর পিও মাহবুব এর মাধ্যমে প্রায় ১ কোটি ৫২ লাখ টাকা ক্যাশ উত্তোলন করে সরিয়ে ফেলেন।

এভাবে তিনি অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ গোপন করার চেষ্টা করেছেন। বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় বর্তমান ২০১৬-১৭ অর্থবছরের আয়কর রিটার্নে তিনি তা সমন্বয়ের চেষ্টা করতে পারেন।

উপরোক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে সিনহা পরিষ্কারভাবে মানি লন্ডারিং এবং উেকাচ গ্রহণের মতো ফৌজদারি অপরাধ সংঘটিত করেছেন বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।

এসকে সিনহা পরিষ্কারভাবে মানি লন্ডারিং আইন ২০১২ এবং উেকাচ গ্রহণের মাধ্যমে দণ্ডবিধির ১৮৬০ সালের আইনের ১৬১ ধারা মোতাবেক অপরাধ সংঘটিত করেছেন।

এদিকে এসকে সিনহা বিভিন্ন ধরনের রাষ্ট্র বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে সেগুলোতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়া সহ সমাজের বিভিন্ন স্তরে আলোচনা হচ্ছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, এস কে সিনহা দেশের ভিতর এবং বাইরে বেশ কিছু বিতর্কিত এবং অবাঞ্ছিত ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।

তাঁর উসকানিতে এবং দেশ বিরোধী চক্রের চক্রান্তে স্বার্থান্বেষী মহল কর্তৃক কোনো একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর পর তিনি দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হবেন বলে পরিকল্পনা করছেন।

সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগসমূহের মধ্যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ হলো:__
®১. রাজউক এর প্লটের সরকার নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ না করে নিয়ম বহির্ভূতভাবে প্লট বরাদ্দ ও বাড়ি নির্মাণ।

২০১৩ সালের ৩ ডিসেম্বর উত্তরা সেক্টর-১৫ এ, রোড-১ এর তিন কাঠা আয়তনের ১৫ নম্বর প্লটটি তত্কালীন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নামে বরাদ্দ করা হয়।

পরবর্তীতে তিনি ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে তাঁর বরাদ্দকৃত প্লটটি ২০১৪ সালের ১৩ এপ্রিল ১৫ নম্বর সেক্টর ১৫ হতে ১০ নম্বর সেক্টরে (রোড-১২, প্লট ৫১) নিয়ে আসেন এবং প্লটের আয়তন ৩ কাঠার পরিবর্তে ৫ কাঠায় পুনঃনির্ধারণ করত পুনঃবরাদ্দ করান।

অতিরিক্ত দুই কাঠা জমির মূল্য রাজউক কর্তৃক দুইবার (১৩ এপ্রিল ২০০৪ এবং ১৩ জুন ২০১৬ তারিখে) নোটিস দেওয়ার পরও পরিশোধ করেননি।

এদিকে সিনহার বিরুদ্ধে বিচার সংক্রান্ত রায় এবং সহকারী জজ নিয়োগে দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ সংক্রান্ত অভিযোগ উত্থাপিত হয়।
অভিযোগসমূহ হলো,--
®১. পরেশ চন্দ্র শর্মাকে অভিযোগের দায় হতে অব্যাহতি প্রদান। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২, ঢাকা এর বিচারক পরেশ চন্দ্র শর্মা ৮,০০,০০০/- (আট লাখ) টাকার বিনিময়ে দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ করে মামলা নং-২১৩/২০১৩ এর অভিযোগপত্রের ২ নং আসামি মোঃ শাবাব এর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও জামিন প্রদান করে অভিযোগের দায় থেকে অব্যাহতি প্রদান করেন। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে আইন মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছে।

এছাড়া এসকে সিনহা ভুয়া একাউন্ট সৃজন করত এবং তার কতিপয় নিজস্ব ব্যক্তির মাধ্যমে মামলার তদবির করিয়ে প্রচুর পরিমাণ অবৈধ অর্থ উপার্জন করেন। উক্ত অর্থ তিনি তাঁর কিছু বিশ্বস্ত লোকের (বাংলাদেশি ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ কুমার রায়, সিঙ্গাপুর প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিক রণজিত্, কানাডা প্রবাসী অভিবাসন আইনজীবী মেজর (অবঃ) সুধীর সাহা) মারফত মানি লন্ডারিং এর মাধ্যমে বিদেশে প্রেরণ করেন।

(উপরোক্ত লেখাটুকু দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত, বিশেষ প্রতিনিধি, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ইং ০০:০০ মিঃ)

এবার আসুন সরকারের প্রধান আইন কর্মকরা মাহবুবে আলমের মন্তব্যে কি বলেছেন---

সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বিদেশে বসে যে বই লিখেছেন, তাতে দেশের বিচার বিভাগের ‘ভাবমূর্তি নষ্ট’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সরকারের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম।

তিনি বলেছেন, “আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিরা সে সময় প্রধান বিচারপতি সিনহার সঙ্গে কেন বসতে চাননি- তা প্রকাশ পেলে আরও দুর্গন্ধ ছড়াবে। তাতে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি আরও নষ্ট হবে।”

মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, “সবচেয়ে বড় কথা হল, বিচারপতি সিনহা যা করছেন এটা বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি উনি নিজেই নষ্ট করছেন।”

(bdnews24. Com)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

স্বপ্ন যেন সত্যি হলো, অনেকক্ষণ চুদলাম সানি লিওন'কে!